পানীয়, ওষুধ কিংবা রান্নার উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অ্যালকোহলের ব্যবহার দেখা যায়। অ্যালকোহল সেবনের এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়। প্রাচীন চীনা এবং মিশরীয় সভ্যতা থেকে অ্যালকোহল সেবনের এই প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। এই অভ্যাসের যেমন কিছু ভালো দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু ক্ষতিকর দিক। নেশা হিসেবে নিয়মিত অ্যালকোহল সেবনে দেখা দিতে পারে বিভিন্নরকম শারিরিক জটিলতা। এমনকি অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হতে পারে। অবাক করা বিষয় হলো মানব দেহে অ্যালকোহল জনিত শারীরিক জটিলতা সমূহ কোনোরকম অ্যালকোহল গ্রহন না করেও দেখা দিতে পারে। শারিরীক এই জটিলতাকে বলা হয় “গাট ফার্মেন্টেশন সিনড্রোম” (Auto-Brewery Syndrome)। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডে কর্মরত চারজন গবেষক বিরল এই গাট ফার্মেন্টেশন সিনড্রোমের বিবরণী নিয়ে প্রকাশ করেছেন একটি গবেষণাপত্র। এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যাক্তির রক্তে জৈবিক প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহলের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা একজন নিয়মিত অ্যালকোহল সেবনকারী ব্যক্তির মধ্যে প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যায়। ফলে সাধারণত মাথা ঘুরা, অস্পষ্ট কথা, ঘোরের মধ্যে থাকা, অসংলগ্ন চলাফেরা সহ নানারকম স্নায়বিক বৈকল্য দেখা যায়।
মূলত আমাদের পাকস্থলীতে থাকা বিভিন্ন গাট ব্যাক্টেরিয়া; Klebsiella pneumoniae, Candida albicans, C. glabrata, Saccharomyces cerevisiae, C. intermedia, C. Parapsilosis এবং C. Kefyr প্রভৃতি খাদ্য তালিকায় থাকা কার্বোহাইড্রেটকে ভেঙে অ্যালকোহলে রুপান্তরিত করে। সতেরোটি কেস রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে গবেষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হয়। গাট ফার্মেন্টেশন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শারিরীক সমস্যার সাথে সাথে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতির। সম্মুখীন হতে হয় নীতি এবং মূল্যবোধ সংক্রান্ত গ্লানির। অধিকাংশ মানুষের কাছেই গাট ফার্মেন্টেশন সিনড্রোমের বিষয়টি অজানা। কেননা, এই সিনড্রোম নিয়ে তেমন কোনো রিপোর্ট করা হয়নি। এই সিনড্রোম সংক্রান্ত যথার্থ তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে যথাযথ ডায়গনোসিস নিশ্চিত করা এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতির একটি ভাবনা উন্মোচন করাও ছিলো এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।
Reference: Gut fermentation syndrome: A systematic review of case reports
লেখকঃ চৌধুরী দ্বয়